ইসরায়েলের সঙ্গে কয়েক দশক ধরে বড় ধরণের বৈরীতা চলমান থাকলেও এবারই প্রথম দেশটির ওপর সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান। সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে অবস্থিত ইরানি কনস্যুলেটে ইসরায়েলি প্রাণঘাতী হামলার পর প্রতিশোধ হিসেবে রোববার রাতে ইসরায়েলের ওপর বড়সড় হামলা চালিয়েছে ইরান। শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্রের এই হামলা রাজনৈতিক ও সামরিক বিশ্বে এক নজির স্থাপন করেছে। এর আগে, কোনো একক দেশ কোথাও এত বড় ড্রোন হামলা চালায়নি।
দশকের পর দশক ধরে দুই দেশের মধ্যে বৈরীতা চলতে থাকলেও এবারই প্রথম ইসরায়েলের ওপর সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান। হামলার পিছনে তেহরান রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এই হামলা মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে আরও অস্থির করে তুলতে পারে, এটি আঞ্চলিক যুদ্ধের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে পারে, প্রভাবিত করতে পারে গাজায় চলমান যুদ্ধকেও।
হামলার পেছনের রাজনীতি ইসলামিক রেভল্যুশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) অপারেশনটির নাম দিয়েছে ‘ট্রু প্রমিস’। এমন নাম দেওয়ার পেছনে রয়েছে বিশেষ কারণ। তেহরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা এর আগে ইরানের ওপর চালানো ইসরাইল ও তার মিত্রদের হামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘শাস্তি’র যে অঙ্গীকার করেছিলেন, তা তারা রক্ষা করেছেন– সেটি বোঝাতেই অপারেশনের নাম দেওয়া হয়েছে ‘ট্রু প্রমিস’ বা সত্যিকারের প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার।
গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই হামলায় সিরিয়া ও লেবাননে চলমান অপারেশনের দায়িত্বে থাকা দুই জেনারেল ও আরও ছয়জন লোকসহ মোট সাতজন আইআরজিসি সদস্য নিহত হন। মূলত ওই হামলার প্রতিক্রিয়াতেই ইসরায়েলের ওপর ইরানের সাম্প্রতিক এই ড্রোন হামলা। এছাড়া, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে ইরাকে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলেইমানিকে হত্যা এবং গেলো ডিসেম্বরের শেষদিকে সিরিয়ায় ইসরায়েলি বিমান হামলায় আইআরিজিসির আরেক শীর্ষ কমান্ডার রাজি মুসাভির মৃত্যু– ইরানের এই হামলার ইন্ধন যুগিয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে।
এ অঞ্চলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের একের পর এক দ্বান্দ্বিক নীতি ও সামরিক হামলার জবাবেও ইসরায়েলের ওপর এ হামলা হয়ে থাকতে পারে। তবে এই হামলায় ইসরায়েল এবং প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার কিছু সুবিধাও পাচ্ছে। এ অঞ্চলে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ায় এখন মার্কিন সামরিক বাহিনীকে ইরানের বিরুদ্ধে আরও জোরালো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাবে, যা ইসরায়েলের জন্য নিঃসন্দেহে ভালো খবর। অন্যদিকে, নজিরবিহীন এই হামলার খবরের নিচে হয়তো গাজা উপত্যকায় হাজার হাজার নারী ও শিশু মৃত্যুর খবর চাপা পড়ে যাবে। এটিও ইসরায়েলের জন্য সুবিধা বয়ে আনছে।
সূত্র: আল-জাজিরা
অনুবাদ: মাহাদী আহমেদ