নিম্নবিত্তদের কাছে ঢাকা যেন ঘৃণ্য সঙ্গীর সাথে বাধ্য হয়ে একই খাটে ঘুমানো। বিত্তশালীদের কাছে ঢাকা হচ্ছে অনেক টাকা দিয়ে দামী পতিতা কিনে এক খাটে ঘুমানো।
ঢাকা একটি নিষ্ঠুর শহর। যেখানে সবাইকে গাদাগাদি করে থাকতে হয়। আবার ঈদের ছুটিতে এই ঢাকাকে সবচাইতে অসহায় লাগে। তখন একটি স্বাভাবিক কাজের জন্য সবকিছু এভেইলবেল পাওয়া যায় না। মানুষ ঢাকাকে আপন করে নেয় না। ঢাকাও মানুষকে আপন করে নেয় না। সারাদেশ থেকে আসা মানুষের সাথে রাজধানীর খুবই কম ইমোশনাল এটাচমেন্ট। এরকম হওয়ার অনেক কারণের মধ্যে লক্ষণীয় দুটি প্রধান বিষয় একটি সামাজিক, অন্যটি রাজনৈতিক।
প্রধান একটা সামাজিক কারণ হলো ঢাকার বাড়িভাড়া ও তার প্রথার অমানবিক চাপ। যা পুরাতন জমিদার প্রথার পরিবর্তে এযুগে প্রচলিত। এখানে মানুষের বাসস্থান নিশ্চিত করতে আয়ের ৬০ ভাগ ব্যয় করতে হয়। বাকি ৫টি চাহিদার ব্যয় খাবার, পোষাক, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন ৪০ ভাগের মধ্যে সীমিত রাখতে হয়। তাই তো গ্রামীণফোনের মিউজিক স্বপ্ন যাবে বাড়ি মানুষের মধ্যে এত প্রচলিত। এত আয়োজন করে মানুষ ঢাকায় থেকেও সে ঢাকাকে নিজের আরেকটা বাড়ি মনে করতে পারে না। এরজন্যই বিশেষ সময়ে ঢাকা অসহায় শহর।
এদিকে আরেকটি প্রধান রাজনৈতিক কারণ হলো ঢাকাকে প্রচন্ড কেন্দ্রীকরণ করে রাখা। নাগরিক সুবিধাকে ভয়ংকর অব্যবস্থাপনার মধ্যে ঠেলে রাখা। কমপক্ষে ৪টি সিটি কর্পোরেশনের জায়গায় দুটি দুর্বল সিটি কর্পোরেশন দিয়ে প্রায় ৫ কোটি মানুষের নাগরিক সুবিধা দেয়ার বৃথা চেষ্টা। বাংলাদেশের যেকোন অঞ্চল থেকে চাহিদানুযায়ী ভালো সার্ভিস নিতে হলে ঢাকায় আসতেই হয়। হোক সেটা ভালো চিকিৎসা, ভালো জীবিকার পথ, ভালো শিক্ষা, ভালো পোষাক, ভালো বিনোদন ইত্যাদি। এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক কোন জুট-ঝামেলা, কাগজপত্রের পেঁচ ছুটাতে হলে ঢাকায় দৌড় দেয়া লাগে। এজন্যই প্রতিটা অযোগ্য শহরদের তালিকায় সেরা হয়ে থাকে ঢাকা। তাই ঢাকা অমানবিক শহর।