কাশ্মীর সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সামরিক সংঘর্ষ শুধুই দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার বিষয় নয়—এটি চীনের জন্য ছিল এক বিরল গোয়েন্দা সুযোগ। সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের সামরিক কৌশল, প্রযুক্তি ও প্রতিক্রিয়ার গতিপ্রকৃতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ পেয়েছে চীন, যা ভবিষ্যতের জন্য কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হতে পারে।
সিঙ্গাপুরভিত্তিক নিরাপত্তা বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নেইল বলেন, “ভারতের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা সীমান্ত থেকেই সরাসরি পর্যবেক্ষণ করা যাওয়া একটি অনন্য সুযোগ।” এ সময় চীন ভারতের সেনাবাহিনীর তৎপরতা, প্রতিক্রিয়া এবং অস্ত্র ব্যবহারের পদ্ধতি নথিভুক্ত করার সুযোগ পায়।
দুই মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তার বরাতে জানা গেছে, পাকিস্তানি বাহিনী চীনা প্রযুক্তিনির্ভর জে-১০সি ও জেএফ-১৭ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে অন্তত পাঁচটি ভারতীয় যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে, যার মধ্যে তিনটি ছিল ফরাসি নির্মিত রাফায়েল, একটি মিরাজ ২০০০ ও একটি রুশ প্রযুক্তির সু-৩০ যুদ্ধবিমান। ভারত এসব দাবি অস্বীকার করলেও ফ্রান্স অন্তত একটি রাফায়েল জেট ধ্বংস হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। পাকিস্তান দাবি করেছে, এসব হামলায় তারা পিএল-১৫ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করেছে।
বিশ্বজুড়ে সামরিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ধরনের বাস্তব সংঘর্ষ যুদ্ধবিমান, পাইলট দক্ষতা ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি মূল্যায়নের এক বিরল ক্ষেত্র তৈরি করে। এসব তথ্য ভবিষ্যতের যুদ্ধ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
চীন ও ভারতের মধ্যে বহু বছর ধরেই হিমালয় সীমান্তকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা বিরাজমান। ২০২০ সালে ঘটে যাওয়া সীমান্ত সংঘর্ষের রেশ কাটিয়ে ২০২৪ সালে তারা যৌথ টহল পরিচালনার বিষয়ে একমত হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মনোভাব এখনো অব্যাহত। দু’পক্ষই সীমান্তে সেনা সংখ্যা ও নজরদারি বাড়িয়েছে। তবে চীনের গোয়েন্দা শক্তির অন্যতম মূল ভরসা মহাকাশভিত্তিক প্রযুক্তি।
লন্ডনভিত্তিক থিংকট্যাংক আইআইএসএস-এর তথ্য অনুযায়ী, চীনের এখন ২৬৭টি সক্রিয় স্যাটেলাইট রয়েছে, যার মধ্যে ১১৫টি নজরদারি ও ৮১টি ইলেকট্রনিক গোয়েন্দা নজরদারির কাজে ব্যবহৃত হয়। এই সংখ্যাটি ভারতসহ অন্যান্য আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীর তুলনায় অনেক বেশি, যা গোয়েন্দা সক্ষমতার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পরে দ্বিতীয় স্থানে চীনকে অবস্থান করায়।
বিশ্লেষকরা আরও মনে করছেন, ভারত যদি তার ব্রহ্মোস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রের মতো কোনো কৌশলগত অস্ত্র ব্যবহার করত, তবে সেটি চীনের বিশেষ আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকত। এখনো পর্যন্ত এই অস্ত্র ব্যবহার হয়নি—ফলে চীন তার সক্ষমতা নিয়ে নিবিড়ভাবে তথ্য সংগ্রহে আগ্রহী।
এছাড়া ভারত মহাসাগরেও চীন তার নজরদারি জোরদার করেছে। চীনা গবেষণা জাহাজ, স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং জাহাজ ও মাছ ধরার নামে গোপন গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রাহক জাহাজ মোতায়েন করা হচ্ছে। ওপেন সোর্স বিশ্লেষক ড্যামিয়েন সাইমন জানিয়েছেন, ১ মে তারিখে ভারতের নৌ মহড়ার কাছে ২২৪টি চীনা মাছ ধরার জাহাজ একত্রে ঘোরাফেরা করেছে, যা গোয়েন্দা কার্যক্রমেরই অংশ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সব মিলিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি যেমন আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে, তেমনি চীনের জন্য এটি পরাশক্তি হয়ে ওঠার পথে এক কৌশলগত সোনার খনি হিসেবে কাজ করছে।