27.8 C
New York
13.1 C
Zurich
25 C
Dhaka
Saturday, April 19, 2025
HomeDhakaরাশিয়ার সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান সু-৭৫

রাশিয়ার সর্বাধুনিক যুদ্ধবিমান সু-৭৫

যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫-কে টক্কর দিতে রাশিয়া তৈরি করেছে পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার জেট সু-৭৫ চেকমেট। এটিকে বলা হচ্ছে এলটিএস বা লাইট টেকটিক্যাল এয়ারক্রাফট। সুখোই কোম্পানির নকশাকৃত এক ইঞ্জিনের এই যুদ্ধবিমানটিকে বলা হচ্ছে রাশিয়ার বিমান বাহিনীর আগামীদিনের সেরা অস্ত্র। আকাশে এটি যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি এফ-৩৫ ও চীনের জে-৩১ ফাইটারকে টেক্কা দিতে পারবে বলে দাবি করছেন রুশ কর্মকর্তারা।

যুক্তরাষ্ট্র তার ন্যাটো মিত্রদের নিয়ে গড়ে তুলেছে এফ-৩৫ এর যৌথ প্রকল্প। একই রকমভাবে রাশিয়া মিত্র দেশগুলোকেও দেবে সু-৭৫। বিমানটি এখনও ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছর বিমানটির পরীক্ষামূলক উড্ডয়নের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেছে। তবে এটি যে আগামী দিনের আকাশ যুদ্ধকে বদলে দিতে রাশিয়ার নতুন হাতিয়ার হতে যাচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

২০২১ সালের জুলাইয়ে দিকে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর বাইরের ছোট্ট শহর জুকোভস্কিতে অনুষ্ঠিত হয় এমএকেএস-ইন্টারন্যাশনাল অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড স্পেস শো। ছয় দিনের ওই প্রদর্শনীতে রাশিয়ার তৈরি কমব্যাট এয়ারক্রাফট, হেলিকপ্টার, ড্রোন, অ্যান্টি এয়ারক্রাফট মিসাইলসহ অত্যাধুনিক কিছু সামরিক সরঞ্জাম প্রদর্শন করা হয়েছিল।

তবে রুশ গণমাধ্যমগুলো জানায়, ওই প্রদর্শনীতে রাশিয়ার সবচেয়ে বড় স্বার্থ ছিলো তার সর্বাধূনিক ট্যাকটিক্যাল ফাইটারের জন্য ক্রেতা বাছাই করা। সেখানে তারা পরিচয় করিয়ে দিয়েছে সুখোই-৭৫ এলটিএস নামের ফাইটারটিকে। আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণার আগেই বিমানটি পরিচিতি পেয়েছে সু-৭৫ চেকমেট নামে। ফাইটার জেটের বাজারে বিশাল এক মাস্টারপ্ল্যান নিয়ে রাশিয়া তৈরি করছে বিমানটিকে।

যদিও এটি এখনও ডেভেলপমেন্টের পর্যায়ে রয়েছে, তবু এই বিমানটি যে আগামী দিনে গেমচেঞ্জার হতে আসছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। রাশিয়ার কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত এই বিমান সম্পর্কে যেটুকু তথ্য প্রকাশ করেছেন, তাতেই বোঝা গেছে এটি দুই দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে টক্কর দেবে। প্রথমত, আধুনিক প্রযুক্তিতে এটি ছাড়িয়ে যাবে বর্তমান সব ফাইটারকে, দ্বিতীয়ত বিমানটি নিয়ে রাশিয়া কোনো ধরনের একচেটিয়া মনোভাব দেখাবে না। সার্ভিসে যোগ দেওয়ার শুরু থেকেই এটি রফতানির প্রক্রিয়া শুরু হবে। যে কারণেই মূলত ওই প্রদর্শনীতে বিমানটি তোলা হয়েছিল।

ন্যাটোর সাথে আকাশ যুদ্ধে রাশিয়ার অ্যারেস্পেস ফোর্স যাতে পিছিয়ে না পড়ে সেটি নিশ্চিত করতে, অনেকদিন ধরেই উন্নত ফাইটার জেট চাইছিল মস্কো। তাই তো নতুন এই বিমানটির নকশা হাতে পাওয়ার পর সেটি লুফে নিতে দেরি করেনি তারা। রুশ কর্মকর্তার যে সব আভাস দিয়েছেন তাতে বোঝা গেছে, ক্রেতা দেশগুলোর কথা মাথায় রেখে বিমানটির দামও কম রাখা হবে। অর্থাৎ অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে একটি পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার হবে সুখোই-৭৫ চেকমেট।

বর্তমান সময়ে অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে সিঙ্গেল ইঞ্জিনের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটারের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে। ক্রেতারা স্বল্প ব্যয়ে আধুনিক ফাইটার চায়, তাদের এই চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিমানটির নকশা করা হয়েছে। এবং দ্রুত সেটিকে সার্ভিসে আনতে কাজও এগিয়ে চলছে। ৭ বছর আগে বিমানটি নিয়ে পরিকল্পনা শুরু করে রাশিয়ার মিকোয়ান ডিজাইন ব্যুরো। রাশিয়ার বিমান বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিমান নকশা করেছে এই প্রতিষ্ঠানটি। নকশা করেছেন রুশ অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার অ্যালেকসেই বুলাতভ। পরবর্তীতে এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন।

সু-৭৫ বিমানটিতে নকশা ও বৈশিষ্টের দিক থেকে সু-৩৫, সু-৫৭ ও মিগ ফাইটারের সংমিশ্রণ থাকবে। লেজের ডিজাইন হবে ভি আকৃতির। বিমানটির ওজন হবে অপেক্ষাকৃত কম। বিমানটি তৈরি করছে রাশিয়ার শীর্ষস্থানীয় বিমান প্রস্তুতকারী সংস্থা জেএসসি সুখোই কোম্পানি।

এটি হবে এক ইঞ্জিনের পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ ফাইটার। এর রাডার, সেন্সর, অ্যাটাকিং পাওয়ার এবং কন্ট্রোল সিস্টেমের সব কিছুতেই নতুনত্ব নিয়ে আসবে বলে জানিয়েছেন রুশ ইঞ্জিনিয়াররা। বিশেষ করে অপারেটিং সিস্টেম হবে তুলনামূলক সহজ এবং এতে অনেক কম ইকুইপমেন্ট ব্যবহৃত হবে। যার ফলে পাইলট সিস্টেমের দিকে কম মনোযোগ রেখে তার টার্গেটের দিকে দৃষ্টি দিতে পারবেন সহজে।

পঞ্চম প্রজন্মের অন্যান্য ফাইটারের মতোই এতে থাকবে ইন্টারনাল ওয়েপন বে, যেখানে অত্যাধুনিক এয়ার টু এয়ার ও এয়ার টু সারফেস মিসাইল বহন করতে বিমানটি। কোন কোন ধরনের মিসাইল থাকবে এই ফাইটারে- সে সম্পর্কে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এখনও কিছু না বললেও প্রোটোটাইপ দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সু-৩৫ ও সু-৫৭ যেসব মিসাইল বহন করে সেগুলো তো থাকবেই, এর পাশাপাশি চমক হিসেবে থাকতে পারে নতুন কোন সংযোজন।

সু-৩৫ ফাইটারে ৬ ধরনের এয়ার টু এয়ার মিসাইল, ৩ ধরনের এয়ার টু সারফেস মিসাইল এবং অ্যান্টি শিপ ও অ্যান্টি রেডিয়েশন মিসাইল থাকে। রাশিয়ার বিখ্যাত কিঞ্জাল মিসাইলের সবগুলো সংস্করণ বহন করতে পারে সু-৩৫। এসব মিসাইলের সবগুলোই থাকবে সু-৭৫ চেকমাস্টার ফাইটারে। আরো থাকবে বিভিন্ন ধরনের বোমা বহনের ব্যবস্থা। সবমিলিয়ে বিমানটি ৭ হাজার ৪০০ কেজি ওজনের অস্ত্র বহন করতে পারবে।

এক ইঞ্জিনের বিমানটি ইন্টারনাল ফুয়েল ট্যাঙ্কের মজুদ দিয়ে ১ হাজার ৮০০ মাইল পর্যন্ত উড়তে পারবে। এক্সটারনাল ফুয়েল ট্যাংক যুক্ত করলে এই দূরত্ব বেড়ে যাবে অনেকখানি। প্রাথমিকভাবে এই মডেলের ৩০০টি ফাইটার বানানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রাশিয়া। তবে এই সংখ্যা বাড়তে পারে।

রাশিয়ার বিমান বাহিনীর জন্য এক বা একাধিক বহর রাখার পর বাকি বিমানগুলো বিক্রি করা হবে বিভিন্ন মিত্র দেশের কাছে। প্রাথমিকভাবে এটির জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোকে সম্ভাব্য ক্রেতা হিসেবে টার্গেট করেছে মস্কো। সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে বিষয়টি নিয়ে মস্কোর আলোচনা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতার দিক থেকে বিমানটিকে বলা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার এফ-৩৫ চীনের জে-৩১ এর বিকল্প। শুরুতে ২০২৪ সালে বিমানটি আকাশে তোলার পরিকল্পনা ছিলো নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটির। তবে সেটি পিছিয়েছে। সম্ভবত আরো বছর পাঁচেক লাগবে এই বিমান সার্ভিসে যুক্ত হবে।

রাশিয়া চাইছে প্রথম ১৫ বছরের মধ্যে এটির অন্তত ৩০০টি বিমান বিভিন্ন দেশের বহরে যুক্ত করতে। সু-৭৫ নিয়ে রাশিয়ার উদ্দেশ্য- বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোর বাজার ধরা। সেই সাথে অঞ্চলটিতে নিজেদের প্রভাব জোরদার করা।

সাম্প্রতিক ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মনে হচ্ছে, এই অঞ্চলের অনেক দেশেরই উন্নত প্রযুক্তির ফাইটার জেটের চাহিদা অনুভব করছে, তারা কিনতেও আগ্রহী। এই অঞ্চলের সবগুলো দেশেরই যেকোন সর্বাধূনিক ফাইটার কেনার পর্যাপ্ত আর্থিক সামর্থ আছে। তবুও আপাতত তাদের ফোর প্লাস জেনারেশনের ফাইটার নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল একমাত্র দেশ, যাদেরকে এফ-৩৫ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, আর কাউকে নয়। যে কারণে রাশিয়া এই দেশগুলোর চাহিদাকে কাজে লাগিয়ে ফাইটার জেটের রফতানি বৃদ্ধি করতে চাইছে। এতদিন রাশিয়ার কোন পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার জেট না থাকায় মুসলিম প্রধান এই দেশগুলো খুব একটা রাশিয়ামুখী হয়নি; কিন্তু তাদের সু-৭৫ প্রস্তুত হয়ে গেলে, সেই সঙ্কট কেটে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র এফ-৩৫ নিয়ে যতটা রক্ষণশীল ও কড়াকড়ির বিধান রেখেছে, রাশিয়া তার চেয়ে অনেক সহজ করবে ফাইটার রফতানির প্রক্রিয়া। আবার মার্কিন বিমানগুলোর চেয়ে দামেও অনেক সাশ্রয়ী হবে রাশিয়ার বিমানগুলো, যেটি ক্রেতাদের আকৃষ্ট করবে দ্রুত।

বিদেশী ক্রেতাদের জন্য সু-৭৫ এর দাম হবে ৩০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। আনুসাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়সহ এর দাম হতে পারে ৫৫ থেকে ৭০ মিলিয়ন ডলার। দামের দিক থেকে এটি যুক্তরাষ্ট্রের এফ-৩৫ই শুধু নয়, ফোর প্লাস জেনারেশনের এফ-১৬ ফাইটারের চেয়েও সাশ্রয়ী।

শুরুতে সু-৭৫ বিমানটি সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে রাশিয়া যৌথভাবে উৎপাদন করবে এমন কথা শোনা গিয়েছিলো। তবে এ বিষয়ে আর কোন অগ্রগতির খবর পাওয়া যায়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের সময় আমিরাতকে এফ-৩৫ দেওয়ার অঙ্গীকার করলেও জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর সেটি ঝুলে আছে। সাম্প্রতিক সময়ে আবুধাবির সাথে মস্কোর সম্পর্কের যে ঘনিষ্ঠতা দেখা যাচ্ছে, তাতে সংযুক্ত আরব আমিরাত রাশিয়ার এই বিমানের প্রথম ক্রেতা হয়ে উঠলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

বিশ্বের আর যেসব দেশের কাছে রাশিয়ার মিগ ও সুখোই সিরিজের বিমানগুলো রয়েছে, তাদের জন্যও এই বিমানটি উন্মুক্ত করে দেবে ভ্লাদিমির পুতিনের সরকার। তুরস্ককে এফ-৩৫ প্রকল্প থেকে বাদ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তাই প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের দেশ সু-৭৫ কিনতে আগ্রহী হয়ে উঠবে না- এমনটি বলা যায় না। এর আগে তারা রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম কিনেছে।

রুশ কর্মকর্তারা আরো অনেক দেশের সাথে এটির ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছেন বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও এ বিষয়ে মস্কো পুরোপুরি চুপ রয়েছে। তাদের একটাই কথা, নতুন এই বিমান প্রতিরক্ষা জগতের গেমচেঞ্জার হয়ে উঠবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

9,600FansLike

Latest Articles