21.4 C
New York
15.5 C
Zurich
30 C
Dhaka
Thursday, May 8, 2025

ফ্যাসিস্ট যুগে একটি অভিদা বাংলাদেশে ইতিবাচক শব্দে পরিণত হয়েছিল। পরিবর্তিত স্বদেশে এটা দেখে আজ খুব ভালো লাগছে যে ‘র’ শব্দটি গালিতে পর্যবসিত হয়েছে। এই ধ্বনিসমষ্টি বিগত বছরগুলোতে উচ্চপদ প্রাপ্ত সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাদের বিতর্কিত করে তুলতে পারতো। সেই সন্দেহ আরো বাড়িয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করে, আজ আসলেই কিছু ঝামেলাপূর্ণ লোক সিভিল ও মিলিটারি প্রশাসনে এখনও নেতৃত্বে আছেন এবং তারাই দৈনন্দিন নীতি নির্ধারণ ও নির্বাহী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। সেজন্যেই, নানান জায়গা থেকে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা পৃথক পৃথক প্লাটফর্ম বা কণ্ঠে প্রকৃত দেশপ্রেমিকদের বিরুদ্ধেই এখন জনমনে সংশয় ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে দিচ্ছে।

পেশাগত মতদ্বৈততার কারণে কর্মজীবনে অনেকে আমার কিছু সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি। অবসরপ্রাপ্ত তেমন কয়েকজন অফিসারের মনোবেদনার বহিঃপ্রকাশ সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। এগুলো অত্যন্ত স্থূল বিষয় বিধায় এর উত্তর দিতে আমি বিব্রত বোধ করেছি। তবে সামরিক বিষয়াদি সম্পর্কে কম জানাশোনার কারণে বেসামরিক ব্যক্তিবর্গ তাদের নির্মল মন নিয়ে পড়া এসব চতুর ব্যক্তির কৌশলী বক্তব্যে প্রায়ই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। কারণে অকারণে কিছু ইউটিউবার আমাকে ‘র’ কর্তৃক নির্বাচিত সেনাপ্রধান হিসেবে আখ্যায়িত করছেন।

এদের উত্থাপিত বোলই যদি প্রমাণের ভিত্তি হয়, তাহলে ইন্ডিয়ার পরামর্শে গঠিত শেখ মুজিবুর রহমানের বাকশালে তখনকার সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ এবং উপ-সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হওয়ার তাৎপর্য কী? ওনারা কি ইন্ডিয়ার এজেন্ট ছিলেন! একদলীয় স্বৈরশাসন বাকশাল কায়েমের পরে এই দুই মরহুম জেনারেল চুপচাপ বসেছিলেন কেন? বলেন দেখি, তাঁরা কেউ সংবিধান লঙ্ঘন করে সামরিক হস্তক্ষেপ করেননি কেন!

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সামরিক গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব প্রদানকারী সেনা অফিসারদেরকে এই দু’জন সেনাপ্রধান অপছন্দ করতেন কেন? কেন তাদেরকে দেশান্তরিত করেছিলেন? ইন্ডিয়াকে খুশি করার জন্য নয় কি?

দেশবাসীর নিশ্চয় মনে আছে, মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর সামরিক ক্যু করে তৎকালীন রাষ্টপতি খন্দকার মোশতাককে ক্ষমতাচ্যুত করেছিলেন। খালেদ মোশাররফ কাদের লোক তা নিয়ে দেশের জনগণের মধ্যে একটা ধারণা আছে। এরপরের প্রশ্নটি হচ্ছে, কোন আঞ্চলিক শক্তিকে খুশি করতে ১৯৭৬ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক আহমেদকে গ্রেফতার করে দুর্নীতির দুটি অভিযোগে সামরিক আদালতে ৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

কোন প্রতিবেশী দেশের গোয়েন্দা অভিযানে ১৯৮০ সালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সাবেক রাষ্টপতি খন্দকার মোশতাক আহমেদের জনসভায় বোমা হামলা হয়েছিল, যেখানে নিহত হয়েছিলেন ১১ জন মানুষ। তখন কে রাষ্ট্রপ্রধান ছিলেন? সেই হতাহতের ঘটনার কি কোনো বিচার হয়েছিল? কারো সাজা হবার কথা কি শুনেছেন? বলেন দেখি, কোন দেশের এজেন্টরা এত বড় অপরাধকে ধামাচাপা দিয়েছিল?

প্রেসিডেন্ট এরশাদের ইন্ডিয়া অনুরাগ সম্পর্কে দেশবাসী জানেন। এটাও কি ভুলে যাওয়া সম্ভব, বেশ কয়েকজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বঞ্চিত করে, দেশের কোন প্রেসিডেন্ট এই জেনারেলকে সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন! ‘র’-এর নির্দেশ বা অনুরোধ শুনে কবে এবং কেন তাদের পছন্দের জেনারেল হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে সেনাপ্রধানের পদে নিয়োগ দিতে হয়েছিল?

বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকতে জেনারেল আবু সালেহ মোহাম্মদ নাসিমকে বাংলাদেশর সেনাপ্রধান বানিয়েছিলেন কেন? পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হয়ে তিনি সেনাপ্রধান পদে নিয়োগ দেন জেনারেল মইন ইউ আহমেদকে! কার নির্দেশ বা অনুরোধে তিনি বারে বারে ওদের লোককে সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ পদে বসিয়েছিলেন?

রাজনীতির শীর্ষ ব্যক্তিরা আমার এসব প্রশ্নের উত্তর যে দিতে পারবেন না, তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি। কিন্তু তারা হীনদলীয় স্বার্থে বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের উস্কানি দিতে পারবেন এবং তা চালিয়েও যাবেন। অভিন্ন কারণে জানি, এই ইউটিউবাররা ক্ষান্ত বা ক্লান্ত হবেন না। কারণ, দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জনদৃষ্টিতে সহজেই ধরা পরে যাওয়া ‘র’-এর এজেন্ডদেরকে আড়াল করার জন্য তারা আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাবেন। এসবই দলীয় রাজনৈতিক প্রকল্প হিসাবে অব্যাহত থাকবে।

যে সকল বিষয়ের সঙ্গে আমি মোটেই সম্পৃক্ত নই— যেমন উলফল্যান্ডকে রেডল্যান্ড বানানো বা নতুন ইউনিফর্ম চালু করা; বুঝে না-বুঝে এসবের দায়ও আমার ওপর অন্যায়ভাবে চাপিয়ে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। শুধু কি তাই, এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে ইন্ডিয়াকে জড়িয়ে আমাকে ‘র’ এজেন্ট হিসাবে তুলে ধরা হচ্ছে। সেজন্যেই আমি কিছু ঘটনা ও পদোন্নতি সূত্র উল্লেখ করলাম, আমার নিন্দুকদের মানদণ্ড ব্যবহার করে অভিন্ন বিবেচনায় আর কোন কোন শাসককে ‘র’-এর এজেন্ট বানানো যায় তাও দেখিয়ে দিলাম।

চরিত্র হননের জন্য তারা কষ্টকল্পিত উদ্ভট যুক্তির অবতারণা করছেন। যেমন কেউ কেউ বলেছেন, আমি ইন্ডিয়া থেকে ফিরে এসে ভারতের পরামর্শে প্যারা ইনফেন্ট্রি গঠন করেছি। এ ধরনের চিন্তা সাধারণত তাদের মস্তিষ্ক থেকেই আসতে পারে যাদের ন্যূনতম স্ট্র্যাটেজিক এবং ট্যাকটিক্যাল ধারণা নেই। আপনারাই বলুন, ইন্ডিয়া কেন একটি দল গঠন করতে বলবে, যা তাদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহৃত হবে? আমেরিকা কি ইরানকে কখনও বলবে, ‘যাও তুমি পারমাণবিক বোমা তৈরি করো’?

আমাকে নিয়ে বেসামরিক মন্তব্যকারীদের সমস্যা হলো, তারা কষ্ট করে তথ্য, প্রমাণ সংগ্রহে অপারগ হওয়ায় ন্যায়বিচার করতে সক্ষম হচ্ছেন না। অন্যদিকে রেগে থাকা কিছু অসন্তুষ্ট সেনা কর্মকর্তা, তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থসংশ্লিষ্ট হীনউদ্দেশ্যে দুঃখজনকভাবে কিছু ভুল ও অসত্য তথ্য ব্যবহার করছেন। এরা যা বলছেন, সেগুলোর পক্ষে কখনোই যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে পারবেন না।

একজন সৈনিক হিসাবে আমরা সকলেই পুরোটা জীবন সেনাবাহিনী তথা দেশের জন্য নিবেদন করি। কিন্তু আজ আমার সুনাম ক্ষুণ্ণ করার জন্য উদ্দেশ্যমূলকভাবে অনেক অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে পেশাদারিত্ব থেকে সরিয়ে নেওয়া, খুন, গুম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে ফেলা এবং শত্রুপক্ষের স্বার্থে অপব্যবহার করার জন্য যে লোকগুলো দায়ী, তারাই পরিকল্পিতভাবে আমার বিরুদ্ধে এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।

লেখক: ইকবাল করিম ভূইয়া (সাবেক সেনাপ্রধান)

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

9,600FansLike

Latest Articles