15.3 C
New York
5.2 C
Zurich
24 C
Dhaka
Friday, April 18, 2025
HomeDhakaইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) হল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা

ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) হল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা

ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) হল পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা, যেটি ১৯৪৮ সালে দেশের প্রথম সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর জন্য গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশে তৈরি করা হলেও আইএসআই একটি শক্তিশালী এবং বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে যার অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এই রচনাটির লক্ষ্য আইএসআই-এর ইতিহাস, এর গোপন কার্যকলাপ এবং পাকিস্তান ও বৃহত্তর অঞ্চলে এর প্রভাব সম্পর্কে একটি নিরপেক্ষ ওভারভিউ প্রদান করা।

১. প্রতিষ্ঠা এবং প্রাথমিক বছর:

১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতার পরপরই আইএসআই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, প্রাথমিকভাবে সেনাবাহিনীর জন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে কাজ করার জন্য। পাকিস্তানের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ, বিশেষ করে ভারতের সাথে সম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের দিকে এর প্রাথমিক মনোযোগ ছিল। এই সময়কালে, আইএসআই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে রাজনৈতিক উন্নয়ন পর্যবেক্ষণ এবং দেশের শাসন ব্যবস্থায় সামরিক বাহিনীর প্রভাব নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. রাজনীতিতে সম্পৃক্ততা:

প্রথম বছর থেকেই আইএসআই পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে গভীরভাবে জড়িত ছিল। এটি প্রায়শই সামরিক সংস্থার স্বার্থে অভ্যুত্থান সংগঠিত করতে এবং রাজনৈতিক ফলাফলকে প্রভাবিত করার মূল খেলোয়াড় হিসাবে কাজ করে। বেসামরিক বিষয়ে আইএসআই-এর হস্তক্ষেপ বিতর্কের বিষয় এবং পাকিস্তানে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতায় অবদান রেখেছে।

৩. আফগান যুদ্ধে ভূমিকা:

আইএসআই-এর ইতিহাসে একটি বিশেষ মুহূর্ত ছিল ১৯৮০ এর দশকে আফগান যুদ্ধে এর অংশগ্রহণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা শক্তির সমর্থনে, আইএসআই আফগানিস্তানে সোভিয়েত আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য মুজাহিদিন যোদ্ধাদের অস্ত্র, প্রশিক্ষণ এবং অর্থায়নে কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছিল। এই সময়কালে আইএসআই বিভিন্ন ইসলামপন্থী গোষ্ঠীর সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করতে দেখেছে, যা পরবর্তীতে ধর্মীয় চরমপন্থাকে সমর্থন করার জন্য তার সম্পৃক্ততার ভিত্তি তৈরি করেছে।

৪. জঙ্গিবাদের প্রতি সমর্থন:

আফগানিস্তান থেকে সোভিয়েত প্রত্যাহারের পর আইএসআই পাকিস্তানের অভ্যন্তরে এবং প্রতিবেশী উভয় দেশেই ইসলামপন্থী জঙ্গি গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখে। এটা ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয় যে, আইএসআই আফগানিস্তানে তালেবান এবং ভারত-শাসিত কাশ্মীরে তৎপর বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের মতো গোষ্ঠীগুলোকে আশ্রয় এবং সমর্থন প্রদান করে। এই সমর্থন আফগানিস্তান এবং ভারত উভয়ের সাথেই উত্তেজনা বাড়িয়েছে, যার ফলে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ উঠেছে।

৫. সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকার অভিযোগ:

প্রতিবেশী দেশগুলোকে অস্থিতিশীল করা এবং পাকিস্তানের কৌশলগত উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে বোমা হামলা, হত্যাকাণ্ড এবং অন্যান্য নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড সহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অসংখ্য অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছে আইএসআই। এই অভিযোগগুলো তার প্রতিবেশীদের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ককে উত্তেজনাপূর্ণ করেছে এবং সন্ত্রাসদমন সংক্রান্ত বিষয়ে তার আন্তর্জাতিক বিচ্ছিন্নতায় অবদান রেখেছে।

৬. সন্ত্রাস দমনে ভূমিকা:

সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও আইএসআই সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধের প্রচেষ্টায়, বিশেষ করে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে জড়িত। এটি পাকিস্তানের সীমানার মধ্যে তৎপর আল-কায়েদা এবং অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোকে পরাজিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য মিত্রদের সহযোগিতা করেছে।

৭. অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রভাব:

আইএসআই-এর প্রভাব পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি, মিডিয়া এবং সুশীল সমাজে উল্লেখযোগ্যভাবে সম্পৃক্ত থাকার সাথে সাথে বাইরের বিষয়েও তার ভূমিকা প্রসারিত। এর বিস্তৃত পরিধি এবং অস্বচ্ছ কার্যকারিতা সংস্থাটির জবাবদিহিতা এবং পাকিস্তানে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার উপর এর প্রভাব সম্পর্কে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

৮. বিতর্ক এবং সমালোচনা:

বছরের পর বছর ধরে আইএসআই অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক উভয় ক্ষেত্রেই অসংখ্য বিতর্ক ও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং বেসামরিক প্রতিষ্ঠানে হস্তক্ষেপের অভিযোগ।

সংস্থাটির স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার অভাব জনসাধারণের মধ্যে অবিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে এবং পাকিস্তানের গতিপথ গঠনে এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

১০. সংস্কার প্রচেষ্টা:

সংস্থাটির বিতর্কিত খ্যাতি সত্ত্বেও আইএসআই এর জবাবদিহিতা এবং কার্যকারিতা উন্নত করার জন্য পর্যায়ক্রমে সংস্কারের আহ্বান জানানো হয়েছে। যাইহোক, অর্থবহ সংস্কার অধরা ছিল পাকিস্তানের নিরাপত্তা সংস্থার মধ্যে সংস্থাটির নিবিষ্ট অবস্থান এবং বহিরাগত তদারকির বিরুদ্ধে এর প্রতিরোধের কারণে।

উপসংহার:

উপসংহারে, ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (আইএসআই) তার সূচনা থেকেই পাকিস্তানের ইতিহাসে একটি উল্লেখযোগ্য এবং প্রায়শই বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে। একটি সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে তার প্রথম দিন থেকে আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িত হওয়া এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোর সমর্থন পর্যন্ত, আইএসআই-এর কর্মকাণ্ড পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্কের জন্য সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছে। যদিও সংস্থাটি পাকিস্তানের কৌশলগত স্বার্থকে এগিয়ে নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে, এর পদ্ধতি এবং উদ্দেশ্যগুলোও ব্যাপক সমালোচনা ও নিন্দা কেড়েছে।

লেখক : ইমরান চৌধুরী, বিইএম (ব্রিটিস এ্যামপায়ার মেডেল)

বৈশ্বিক ভূ রাজনীতি কমেনটেটর, যুক্তরাজ্য।

অনুবাদ : মাহাদি আহমেদ

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

9,600FansLike

Latest Articles